৫ শেণীর মানুষের কবরে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হবে না
কোন কোন শ্রেণীর মানুষদের কবরে কোনো সওয়াল-জবাব হবে না?
সওয়াল-জবাব বা কবরে প্রশ্ন উত্তরের মুখোমুখি হওয়া, এটা একজন ইমানদারের আখিরাতের যাত্রার সবচেয়ে কঠিন এবং জটিল মূহুর্ত। এই জটিল মূহুর্ত যাদের জন্যে সহজ হয়ে যায়, তাদের পরবর্তী আখিরাতের ধাপ গুলোও সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। কোরআন এবং হাদিসে বলা আছে, ৫ শ্রেণীর মানুষের কবরে আল্লাহ তায়ালা কোনো প্রশ্ন উত্তরের মুখোমুখি করবেন না। অর্থাৎ কোন প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ বাদেই তারা আখিরাতের প্রথম ধাপ পার হয়ে যাবেন।
১. যে ব্যক্তি ইসলামী রাষ্ট্রের ভূখণ্ড বা সীমান্ত পাহারায় থাকেন।
পোস্টসূচীপত্রঃযারা ইসলামী রাষ্ট্রের ভূখণ্ডকে পাহারা দিয়ে থাকে (যাদেরকে আমরা বর্ডার গার্ড বলে থাকি) তাদের কবরে কোনো সওয়াল-জবাব করা হবে না।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন "রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন – কোন ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত অঞ্চল পাহারাদানরত অবস্থায় মারা গেলে আল্লাহ তার জন্য সেইসব নেক আমলের সওয়াব প্রদান অব্যাহত রাখবেন, যা সে (জীবিত থাকা অবস্থায়) করতো। জান্নাতে তাকে রিজিক দান করবেন। কবরের বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে নিরাপদ রাখবেন। আর কেয়ামতের ভয়ভীতি থেকে মুক্ত অবস্থায় উঠাবেন"। (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, রাওদুন নাদীর, আত-তালিকুর রাগিব)
২. শহীদ। যিনি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছেন।
হযরত মিকদাম ইবনে মাদি কারিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন "রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন – শহিদের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে ৬টি পুরস্কার রয়েছে। তা হলো –
- তার প্রথম রক্তবিন্দু পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ক্ষমা করা হয়।
- তাকে তার জান্নাতের বাসস্থান দেখানো হয়।
- কবরের আজাব থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
- সে কঠিন ভয়-ভীতি থেকে নিরাপদ থাকবে।
- তার মাথায় মর্মর পাথর খচিত মর্যাদার টুপি পরানো হবে। যার এক একটি পাথর দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম।
- তার সঙ্গে টানা টানা আয়তলোচনা ৭২জন জান্নাতি হুরকে বিয়ে দেওয়া হবে এবং তার ৭০ জন নিকটাত্মীয়ের জন্য তার সুপারিশ কবুল করা হবে।" (তিরমিজি, তালিকুর রাগিব)
৩. যে ব্যক্তি নিয়মিত রাতের বেলা 'সূরা মুলক' তেলাওয়াত করেন।
'সুরা মুলক' পবিত্র কোরআনের ২৯ তম পারার ১ম সূরা। শোয়ার আগে যদি কেউ 'সূরা মুলক' তেলাওয়াত করে, তাহলে আল্লাহ রব্বুল আলামীন তার কবরের আজাব, ফিতনা, পরীক্ষা, জিজ্ঞাসা থেকে তাকে হেফাজত করবেন।
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন – কোনো এক সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক সাহাবি একটি কবরের উপর তার তাবু খাটান। তিনি জানতেন না যে, তা একটি কবর। তিনি হঠাৎ বুঝতে পারেন যে, কবরে একজন লোক ‘সূরা মুলক’ পাঠ করছেন। সে তা পাঠ করে সমাপ্ত করলো। তারপর তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, 'হে আল্লাহর রাসুল! আমি একটি কবরের উপর তাঁবু খাটাই। আমি জানতাম না যে, তা কবর। হঠাৎ বুঝতে পারি যে, একটি লোক ‘সূরা মুলক’ পাঠ করছে এবং তা সমাপ্ত করেছে'। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন – ‘এ সুরাটি প্রতিরোধকারী, নাজাত দানকারী। এটা কবরের আজাব থেকে তিলাওয়াতকারীকে নাজাত দান করে’। (তিরমিজি)
৪. যে ব্যক্তি জুমার রাতে এবং জুমার দিনে মৃত্যুবরণ করেন।
যে ঈমানদার ব্যক্তি শুক্রবার রাত অথবা দিনে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে মৃত্যুবরণ করেন, তাকে কবরের ফেতনা বা কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেওয়া হবে বলে আশা রাখা যায়। হাদিসে এসেছে –
হযরত আদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমার দিনে অথবা জুমার রাতে কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার কবরের ফিতনা থেকে আল্লাহ তাআলা তাকে রক্ষা করেন’। (তিরমিজি, মিশকাত)
উল্লেখ্য, অনেক খারাপ মানুষেরও এ সময় মৃত্যু হতে পারে। তবে স্বাভাবিকভাবে যারা ঈমানদার, তাদের জন্য এটি সৌভাগ্যের আলামত। অর্থাৎ, এটি ভালো মৃত্যুর একটি আলমত হিসেবে ধরে নেওয়া যায়।
৫. যে ব্যক্তি পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
ইসলামের জন্য তথা আল্লাহর রাস্তায় শহিদ হওয়া ছাড়াও আরও ৫/৭ শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তাআলা শহিদের মর্যাদা দান করবেন মর্মে হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ মুসলিমে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন। তাদের মধ্যে একজন হলো – 'কেউ যদি পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তবে সে ব্যক্তি শহিদ'। আর শহিদের জন্য কবরের সওয়াল-জবাব হবে না।
বাকি যারা আগুনে পুড়ে মারা যান, পানিতে ঢুবে মারা যান, গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান কিংবা কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মারা যান, তারাও শাহাদাতের মর্যাদা পাবেন।
তবে এসব মৃত্যুর মধ্যে পেটের পীড়ায় মৃত্যুবারণকারীকে নির্দিষ্ট করে ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ এ রোগটি মানুষের জন্য অনেক কষ্টের। যারা দীর্ঘদিন এ রোগে ভুগে ধৈর্যধারণ করে মারা যান তাদের জন্য এ সৌভাগ্য ঘোষণা করেছেন।
এখানে কমেন্ট করুন
comment url