ইস্ট কি এবং কি কাজে ব্যবহার করা হয়? ইস্ট এর দাম কত?

ইস্ট কি এবং এর কাজ কি?

ইস্ট হলো একধরনের ছত্রাক। ইস্ট এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো Saccharomyces cerevisiae। 

পোস্টসূচীপত্রঃইস্ট চিনিকে ভেঙে এথানল (অ্যালকোহল) ও কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াকে গ্যাজানো (Fermentation) বলে। ইস্টের অনেক প্রজাতি ও প্রকারভেদ রয়েছে। 


ইস্টের প্রকারভেদ

ইস্ট (yeast) এর বেশকিছু প্রকারভেদ রয়েছে। এরমধ্যে প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রকারভেদ নিচে দেওয়া হলোঃ

  1. ড্রাই ইস্ট (Dry Yeast)
  2. ফ্রেশ ইস্ট (Fresh Yeast)
  3. ব্রিউয়ার্স ইস্ট (Brewer's Yeast)
  4. নিউট্রিশনাল ইস্ট (Nutritional Yeast)

এগুলো ছাড়াও আরো করেক প্রকারের ইস্ট রয়েছে। তবে, বাজারে সচরাচর ড্রাই ইস্ট এবং ফ্রেশ ইস্ট তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়।

ড্রাই ইস্ট (Dry Yeast) – ড্রাই ইস্ট সাধারণত গুঁড়া বা ছোট দানা আকারে থাকে। এটা ব্যবহার করার আগে গরম পানিতে রাখতে হয়। এর দাম তুলনামূলক কম।

ফ্রেশ ইস্ট (Fresh Yeast) – ফ্রেশ ইস্ট সাধারণত নরম বা ভেজা ব্লকের আকারে থাকে। এটি সবচেয়ে দ্রুত কাজ করে। এই ইস্ট বেকারিতে বেশি ব্যবহৃত হয়। 

ব্রিউয়ার্স ইস্ট (Brewer's Yeast) – ব্রিউয়ার্স ইস্ট বিয়ার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি অ্যালকোহল তৈরির জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। 

নিউট্রিশনাল ইস্ট (Nutritional Yeast) – নিউট্রিশনাল ইস্ট স্বাস্থ্য সাপ্লিমেন্ট ও খাদ্য তালিকায় ব্যবহৃত হয়। 

ইস্ট ব্যবহারের পদ্ধতি 

ইস্ট ব্যবহারের প্রথম ধাপ হলো ইস্ট সক্রিয় করে নিতে হবে। ইস্ট সক্রিয়করণের জন্য, প্রথমে ১ কাপ কুসুম গরম পানিতে ১চা চামচ চিনি বা মধু নিন এবং ১চা চামচ ইস্ট যুক্ত করে ভালো ভাবে নেড়ে মিশিয়ে নিন। এবার ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ইস্ট যদি বাবল বা ফেনা তৈরি করে, তাহলে বুঝবেন এটি সক্রিয় হয়েছে। 

ইস্ট সক্রিয় করা হলে ময়দার সাথে মেশাতে হবে। লবণ, ডিম, তেল এবং অন্যান্য উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে খামির তৈরি করুন। শুষ্ক স্থানে ১-২ ঘন্টা খামির ঢেকে রাখুন। খামির দ্বিগুণ হয়ে গেলে বুঝবেন ইস্ট কাজ করেছে এবং এটি রান্নার জন্য প্রস্তুত। 

ইস্ট সংরক্ষণের সঠিক নিয়ম বা পদ্ধতি

যেহেতু ইস্ট বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তাই ইস্ট সংরক্ষণের পদ্ধতি ও ভিন্ন। নিচে কয়েকটি ইস্ট সংরক্ষণের পদ্ধতি জানানো হলোঃ


ড্রাই ইস্ট সংরক্ষণের পদ্ধতি – প্যাকেট জাত অবস্থায় ঠান্ডা, শুকনো স্থানে সংরক্ষণ করুন এবং প্যাকেট খোলার পর এয়ারটাইট কন্টেইনারে সংরক্ষণ করুন। ড্রাই ইস্ট সাধারণত ৬ মাস থেকে ১ বছর কার্যকর থাকে। 

ফ্রেশ ইস্ট সংরক্ষণের পদ্ধতি – ফ্রেশ ইস্ট ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে। 

নিউট্রিশনাল ইস্ট সংরক্ষণের পদ্ধতি – নিউট্রিশনাল ইস্ট সাধারণত পাউডার বা ফ্লেক আকারে পাওয়া যায়। শুকনো,ঠান্ডা স্থানে সংরক্ষণ করুন। এটি সাধারণত ১-২ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে। 

সাবধানতা 

  1. যে পাত্রে রাখবেন সেটি পরিষ্কার ও জীবাণমুক্ত হতে হবে। 
  2. সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখুন। 
  3. নিয়মিত পরীক্ষা করুন যাতে নষ্ট না হয়।
  4. ব্যবহারের সময় তারিখ লিখে রাখতে পারেন।

ইট নষ্ট হয়ে গেছে কিনা বুঝবো কিভাবে? 

ইস্ট ভালো আছে নাকি নষ্ট হয়ে গেছে, তা পরীক্ষা করার কয়েকটি উপায় নিচে দেওয়া হলোঃ

  • ইস্ট যদি গন্ধহীন বা তিক্ত গন্ধযুক্ত হয়, তাহলে বুঝবেন এটা নষ্ট হয়ে গেছে। 
  • ইস্ট ব্যবহারের সময় যদি ফেনা তৈরি না করে, তাহলে বুঝবেন এটা নষ্ট হয়ে গেছে। 
  • ইস্ট এর রং পরিবর্তন হলে বুঝবেন এটা নষ্ট হয়ে গেছে। 

ইস্ট দিয়ে রেসিপি 

ইস্ট অনেক রকম খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজ রেসিপি হলো পাউরুটি তৈরি। পাউরুটি তৈরির রেসিপি নিচে দেওয়া হলোঃ

উপকরণঃ

  1. ৪ কাপ ময়দা
  2. ২চা চামচ ড্রাই ইস্ট 
  3. ২ টেবিল চামচ চিনি 
  4. ১চা চামচ লবণ 
  5. ১.৫ কাপ কুসুম গরম পানি 
  6. ৪ টেবিল চামচ মাখন/তেল

প্রস্তুত প্রণালীঃ

ইস্ট সক্রিয়করণ থেকে শুরু করে খামির প্রস্তুতকরণ পর্যন্ত আমরা আগেই "ইস্ট ব্যবহারের পদ্ধতি" তে আলোচনা করেছি। 
এবার, প্রস্তুত করে রাখা খামির থেকে বাতাস বের করে আবার একটু মেখে নিন। এরপর রুটি বা পাউরুটির আকৃতি দিয়ে বেকিং ট্রেতে রাখুন এবং ওভেনে দিয়ে ১৮০° সেলসিয়াসে প্রি-হিট করুন। পাউরুটির উপর হালকা দুধ ব্রাশ করে দিন এতে সোনালী রঙ আসবে। ২৫-৩০ মিনিট বেক করার পর, ওভেন থেকে বের করে ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন।

ইস্টের বিকল্প 

ইস্টের বিকল্প হিসেবে যেসব উপকরণ ব্যবহার করা যেতে পারে, সেগুলো নিচে দেওয়া হলোঃ


  • কেক, প্যানকেক, বিস্কুট তৈরিতে ইস্টের বিকল্প হিসেবে বেকিং পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • রুটি, ডোনাট তৈরিতে ইস্টের বিকল্প হিসেবে বেকিং সোডা + ভিনেগার ব্যবহার করা যেতে পারে। 

ইস্টের উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক

ইস্টে যে-সব পুষ্টিগুণ রয়েছে 

  1. ভিটামিন B কমপ্লেক্স 
  2. প্রোটিন 
  3. মিনারেল 
  4. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট 

ইস্টের উপকারিতা সমূহ 

  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হজমে সহায়তা করে। 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 
  • চুল ও ত্বকের যত্নে উপকারী। 
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। 

ইস্টের ক্ষতিকর দিকগুলো 

  • অতিরিক্ত ইস্ট খেলে পেটে গ্যাস ও অস্বস্তি হতে পারে। 
  • কারো কারো ক্ষেত্রে ইস্ট এলার্জি হতে পারে। 
  • খুব বেশি ইস্ট খাওয়ার কারণে Candida Albicans সংক্রমণ হতে পারে। 
  • কিছু ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত ইস্ট ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। 
  • ইস্ট ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়ক। কিন্তু, ইস্ট সমৃদ্ধ খাবার অতিরিক্ত খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। 

ইস্ট এর দাম কত এবং কোথায় পাওয়া যায়? 

ইস্টের দাম প্যাকেটের আকার, ব্রান্ড এবং বিক্রেতার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। যেমনঃ


৫০ গ্রাম ইস্ট এর দাম প্রায় ৬০ - ৯০ টাকা

১০০ গ্রাম ইস্ট এর দাম প্রায় ৮০ - ১৬৫ টাকা 

৫০০ গ্রাম ইস্ট এর দাম প্রায় ৩৯০ - ৯৮০ টাকা 

আমাদের দেশের বিভিন্ন সুপারশপে (Shwapno, Agora, Meena Bazar, ইত্যাদি) ইস্ট পাওয়া যায়।এছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে (Daraz, Rokomari Food, Moslawala, ইত্যাদি) ইস্ট অর্ডার করা যায়। স্থানীয় গ্রোসারি/মুদি দোকান গুলোতেও ইস্ট পাওয়া যেতে পারে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪