ইয়াম (Yam) বা ইয়ামস কী? কোথায় পাওয়া যায়?

ইয়ামস কী?

ইয়ামস (Yam) হলো এক ধরনের শেকড়জাতীয় বা কন্দজাতীয় সবজি বা ফসল। যা, সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন উষ্ণ অঞ্চলে বা গ্রীষ্ম মন্ডলীয় অঞ্চলে চাষ করা হয়। ইয়ামস হলো Dioscorea প্রজাতির উদ্ভিদ। এটি Dioscoreaceae পরিবারের অন্তর্গত। ইয়ামস দেখতে লম্বা আকৃতির এবং মাটির রঙের ছালযুক্ত হয়। এর বেশ কয়েকটা প্রজাতি রয়েছে। প্রজাতিভেদে এর ভেতরের অংশ সাদা, হলুদ, গোলাপি বা বেগুনি রঙের হতে পারে। 


ইয়ামসের উৎপত্তি বা ইতিহাস 

পোস্টসূচীপত্রঃইয়ামস প্রায় ৮০০০ - ১১০০০ বছর আগে থেকে মানুষ চাষ করে আসছে। 
ইয়ামস চাষ সর্বপ্রথম শুরু হয় আফ্রিকায়। বিশেষ করে পশ্চিম আফ্রিকায় ইয়ামস প্রাচীনকাল থেকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য হিসেবে পরিচিত। 
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও ইয়ামসের চাষ বহু প্রাচীন। বিশেষ করে ভারত, চীন, এবং ফিলিপাইনে বেশ জনপ্রিয়। 
এছাড়াও ইয়ামস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় স্থানীয়ভাবে চাষ করা হয়। 

পশ্চিম আফ্রিকায় ইয়ামস এত জনপ্রিয় ছিলো যে এটিকে 'জীবনের রাজা' বলা হতো। এখানে ইয়ামস ফসল উত্তোলনের সময় বিশেষ এক উৎসব পালন করা হয়, যা 'ইয়াম উৎসব' নামে পরিচিত। নাইজেরিয়ার 'ইগবো' সম্প্রদায়ে 'নিউ ইয়াম ফেস্টিভ্যাল' উৎসব পালন করা হয়। 

দাস ব্যবসার সময় ইয়ামস ক্যারিবিয়ান ও আমেরিকায় পৌঁছায়। ঔপনিবেশিক আমলে আফ্রিকা থেকে আমেরিকায় ইয়ামস পরিবহন করা হতো, দাস জাহাজে এটি ক্রীতদাসদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরে এটি ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে স্থানীয় খাদ্যশস্যে পরিণত হয় এবং তখন থেকেই এটি বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। 

বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৯০% ইয়ামস উৎপাদিত হয় আফ্রিকায়। তবে এশিয়া ও লাতিন আমেরিকাতেও এর চাষ বাড়ছে। 

ইয়ামস বনাম মিষ্টি আলু

ইয়ামস এবং মিষ্টি আলু দেখতে কিছুটা একরকম হলেও এদের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান পার্থক্য গুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ 


এছাড়াও, ইয়ামস

  1. আকারে বড় এবং দীর্ঘ হয়।
  2. এটি চাষ করতে ৮-১০ মাস সময় লাগে। 
  3. সাধারণত ইয়ামসের দাম একটু বেশি হয়।

মিষ্টি আলু

  1. ছোট থেকে মাঝারি আকারের হয়।
  2. এটি চাষ করতে ৩-৪ মাস সময় লাগে। 
  3. মিষ্টি আলু তুলনামূলকভাবে সস্তা। 

ইয়ামসের প্রকারভেদ 

ইয়ামসের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। ইয়ামসের আকৃতি, রঙ, স্বাদ ও চাষের এলাকা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির হয়। এর প্রধান ১০টি জাত নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

  1. হোয়াইট ইয়াম (Dioscorea rotunda)
  2. ওয়াটার ইয়াম (Dioscorea alata)
  3. এয়ার পটেটো (Dioscorea bulbifera)
  4. বিটার ইয়াম (Dioscorea dumetorum)
  5. চাইনিজ ইয়াম (Dioscorea esculenta)
  6. ইয়েলো ইয়াম (Dioscorea cayenensis)
  7. ক্রিওল ইয়াম (Dioscorea trifida)
  8. ওকিনাও ইয়াম (Okinawan yam)
  9. গিনি ইয়াম (Guinea yam)
  10. বন ইয়াম (Wild yam)

ইয়ামসের পুষ্টিগুণ 

ইয়ামস (Yam) একটি পুষ্টিকর সবজি। ইয়ামসে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে, এরমধ্যে প্রধান পুষ্টিগুণগুলো হলোঃ

  • ভিটামিন C 
  • ভিটামিন B6 
  • ভিটামিন B1 
  • ভিটামিন B3 
  • পটাশিয়াম 
  • ম্যাঙ্গানিজ 
  • কপার 
  • ফসফরাস 
  • ডায়েটারি ফাইবার 
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট 
  • লো ক্যালোরি

ইয়ামসের স্বাস্থ্য উপকারিতা 


ইয়ামসের অনেক উপকারিতা রয়েছে, এরমধ্যে প্রধান কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা নিচে দেওয়া হলোঃ

  1. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে 
  2. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় 
  3. হাড় মজবুত করে 
  4. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় 
  5. শরীরে এনার্জি বৃদ্ধি করে 
  6. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক 
  7. চুল ও ত্বকের যত্নে উপকারী 
  8. হারমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে 
  9. মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে 
  10. ওজন কমাতে সহায়তা করে 

ইয়ামস রান্নার রেসিপি 

ইয়ামস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু রেসিপি তৈরি করা যায়। যেমন: ইয়ামস ভাজি, ইয়ামস পিউরি, ইয়ামস কারি, ইয়ামস সুপ, ইত্যাদি। এরমধ্যে সবচেয়ে সহজ এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি রেসিপি নিচে দেওয়া হলোঃ

ইয়ামস ভাজি 

আমাদের দেশে ইয়ামস ভাজি বেশ জনপ্রিয় এবং খুব সহজেই এটা রান্না করা যায়।

উপকরণ 

  • ৫০০ গ্রাম ছোট করে কাটা ইয়ামস
  • ১টি পেঁয়াজ কুচি করা
  • ২-৩ কোয়া কুচি করা রসুন 
  • ২-৩টি স্লাইস করা কাঁচা মরিচ 
  • ১/২ চা চামচ লাল মরিচ গুঁড়া 
  • ১ চা চামচ ধনেপাতা
  • ৩ টেবিল চামচ সরিষার তেল 
  • স্বাদ অনুযায়ী লবণ 
  • ১ চা চামচ লেবুর রস 
  • সামান্য ধনেপাতা কুচি (পরিবেশনের জন্য) 

প্রস্তুত প্রণালী 

প্রথমেই ইয়ামসের টুকরো গুলো পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর একটি পাত্রে পানি নিয়ে এর মধ্যে সামান্য লবণ দিয়ে ইয়ামস সেদ্ধ করুন এতক্ষণ নরম না হয়। সেদ্ধ করা হয়ে গেলে পানি ঝরিয়ে আলাদা করে রাখুন। 

এবার একটি ফ্রাই প্যানে তেল গরম করে নিন। গরম তেলে পেঁয়াজ, রসুন এবং কাঁচা মরিচ হালকা ভেজে নিন। এরপর, সেদ্ধ করে রাখা ইয়ামস ফ্রাই প্যানে ঢেলে দিন এবং এরমধ্যে হলুদ, লাল মরিচ, ধনে গুঁড়া এবং লবণ দিন। মাঝারি আছে ৫-৭ মিনিট নাড়ুন, যেন সব মশলা ভালোভাবে মিশে যায়। 

এরপর চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন এবং এর উপরে সামান্য ধনেপাতা এবং লেবুর রস ছড়িয়ে দিন। হয়ে গেলো ইয়ামস ভাজি।

বাংলাদেশে ইয়ামস কোথায় পাওয়া যায়? 

ইয়ামস বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়। বাংলাদেশে যেসব জায়গায় ইয়ামস পাওয়া যায় – স্থানীয় বাজারে পাওয়া যায় (গ্রামীন বাজার বা কাঁচাবাজারে), আমাদের দেশের বড় বড় শহর গুলোতে বিভিন্ন সুপারশপে (স্বপ্ন, আগোরা) ইয়ামস পাওয়া যায়, এছাড়াও কিছু অনলাইন প্লাটফর্মে (Daraz, Chaldal, বা Facebook এর বিভিন্ন পেজে) ইয়ামস বিক্রি হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪