অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা কি কি? অ্যাভোকাডো ফলের দাম কত?

অ্যাভোকাডো কি? দেখতে কেমন?


অ্যাভোকাডো হলো অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল। এই ফল Persea americana নামক গাছ থেকে পাওয়া যায়। এটি সাধারণত গাঢ় সবুজ থেকে কালো রঙের হয়ে থাকে। অ্যাভোকাডো দেখতে অনেকটা নাশপাতির মতো দেখতে। কিন্তু এই ফলের উপরিভাগ কুমিরের গায়ের মতো খসখসে এবং অমসৃণ হওয়ায় এই ফলকে কুমির নাশপাতি ও বলা হয়। অ্যাভোকাডোর বাইরের অংশ শক্ত হলেও ভেতরের অংশ নরম হয়। এর ভেতরে একটি বড় গোলাকার বীজ থাকে।

অ্যাভোকাডোর উৎপত্তি 

পোস্টসূচীপত্রঃঅ্যাভোকাডোর উৎপত্তি মূলত মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকা তে। প্রায় ১০,০০০ বছর আগে মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার লোকজন অ্যাভোকাডো খাওয়া শুরু করেছিলো। 

কোন দেশ সবচেয়ে বেশি অ্যাভোকাডো উৎপাদন করে? 

অ্যাভোকাডো সবচেয়ে বেশি চাষ হয় মেক্সিকো তে। এখনো মেক্সিকো বিশ্বের সবচেয়ে বড় অ্যাভোকাডো উৎপাদক দেশ। শুধুমাত্র মেক্সিকো নয়, মেক্সিকোর পাশাপাশি পেরু, ইন্দোনেশিয়া, কলম্বিয়া তেও এই ফল ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। 

অ্যাভোকাডো ফলের পুষ্টিগুণ 

অ্যাভোকাডো অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল। বিশেষ করে এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে। অ্যাভোকাডোর পুষ্টিগুণের কারণে এটা সুপারফুড হিসেবেও পরিচিত। অ্যাভোকাডো তে যেসব ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছেঃ

  • ভিটামিন-কে
  • ভিটামিন-সি
  • ভিটামিন-ই
  • পটাশিয়াম 
  • ভিটামিন-বি
  • ম্যাগনেসিয়াম

প্রতি ১০০ গ্রাম অ্যাভোকাডো তে যেসব পুষ্টি উপাদান রয়েছেঃ 

  • ১৬০ ক্যালোরি
  • ১৫ গ্রাম ফ্যাট
  • ২ গ্রাম প্রোটিন
  • ৯ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
  • ০.৭ গ্রাম চিনি

অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা কি কি? নিয়মিত অ্যাভোকাডো খেলে কি হয়?

অ্যাভোকাডো ফল আমাদের শরীরে অনেক উপকার বয়ে আনে। অ্যাভোকাডো ফলের কিছু উল্লেখযোগ্য উপকার গুলো নিচে দেওয়া হলোঃ

  • হৃদযন্ত্র ভালো রাখে – অ্যাভোকাডো তে থাকা পটাশিয়াম হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে – অ্যাভোকাডো খাওয়ার পর পেট ভরা অনুভূতি হয়, ফলে অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা যায়। যা ওজন নিয়ন্ত্রণে বা কমাতে সাহায্য করে। 
  • ত্বক ও চুলের যত্নে অনেক উপকারি – অ্যাভোকাডো তে রয়েছে ভিটামিন-ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের ত্বককে মসৃণ করে এবং উজ্জ্বল করে। এছাড়া আমাদের চুলের গোড়া শক্ত করে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে – অ্যাভোকাডো তে রয়েছে ফাইবার। ফাইবার আমাদের হজম শক্তি ভালো রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে – অ্যাভোকাডো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে পটাশিয়াম, যা ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে – অ্যাভোকাডো তে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে, যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় – অ্যাভোকাডো তে থাকা ভিটামিন-সি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

অ্যাভোকাডোর রেসিপি 

অ্যাভোকাডো ফল দিয়ে অনেক সহজ এবং সুস্বাদু রেসিপি তৈরি করা যায়। এরমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো অ্যাভোকাডো সালাদ। নিচে  অ্যাভোকাডো সালাদ রেসিপি দেওয়া হলোঃ

উপকরণঃ

  • ১টি পাকা অ্যাভোকাডো (কিউব করে কাটা)
  • ১ কাপ চেরি টমেটো (গোল করে কাটা)
  • ১/২ কাপ শসা (কিউব করে কাটা)
  • ১/৪ কাপ পেঁয়াজ (ছোট করে কাটা)
  • ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল 
  • ১ চা চামচ লেবুর রস 
  • স্বাদমতো লবণ ও মরিচ 


প্রস্তুত প্রণালীঃ

অ্যাভোকাডো সালাদ তৈরি খুবই সহজ। প্রথমে উপরে উল্লেখিত সব উপকরণ গুলো একটি বড় পাত্রে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর এর উপর লেবুর রস এবং অলিভ অয়েল দিন, আবারও ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। ভালোভাবে মেশানো হলে এবার পরিবেশন করুন অ্যাভোকাডো সালাদ।

সালাদ বাদেও অ্যাভোকাডোর আরো অনেক জনপ্রিয় রেসিপি রয়েছে। যেমন - অ্যাভোকাডো স্মুদি, অ্যাভোকাডো টোস্ট, অ্যাভোকাডো আইসক্রিম, অ্যাভোকাডো সরবিট, অ্যাভোকাডো সুশি, অ্যাভোকাডো পাই, অ্যাভোকাডো কেক, অ্যাভোকাডো মিল্ক সেক, ইত্যাদি। 

বাংলাদেশে অ্যাভোকাডো চাষ 

যদিও অ্যাভোকাডো মেক্সিকো এবং অন্যান্য উষ্ণ মেরু অঞ্চলে চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু ২০২২/২০২৩ সাল থেকে আমাদের বাংলাদেশেও বানিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু হয়েছে। বর্তমানে অ্যাভোকাডো চাষ একটি নতুন লাভজনক চাষ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। নিচে অ্যাভোকাডো চাষ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হলোঃ

অ্যাভোকাডো যেহেতু উষ্ণ মণ্ডলীয় ফল, তাই বাংলাদেশে আবহাওয়ার সাথো সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে। অ্যাভোকাডো চাষের জন্য মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে লবনাক্ত বা কাঁচা মাটি এড়িয়ে চলা উচিত। অ্যাভোকাডোর বীজ বা চারা রোপণ করার সময় ৪-৬ ফুট দুরত্বে রোপণ করতে হবে। অ্যাভোকাডো চাষে নিয়মিত সেচ দিতে হয়। তবে, জমিতে যেন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অ্যাভোকাডো চাষে ভালোমানের জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে এবং বিভিন্ন রোগ বা পোকামাকড় থেজে রক্ষা পেতে নিয়মিত ফাঙ্গিসাইড স্প্রে করতে হবে। অ্যাভোকাডো গাছ সাধারণত ৩-৪ বছর পর ফল দিতে শুরু করে। তবে ভালো মানের ফল পেতে হলে ৫-৭ বছর অপেক্ষা করতে হবে। একটি গাছ থেকে প্রতি বছর ৫০-৬০টি ফল পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বাজারে অ্যাভোকাডোর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। 

অ্যাভোকাডো ফলের দাম কত?

বাংলাদেশে অ্যাভোকাডোর দাম উৎস, সময় এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। তবে আনুমানিক খুচরা অ্যাভোকাডোর বাজার দর গড়ে প্রায় ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি(কম-বেশি হতে পারে)। এছাড়াও অ্যাভোকাডো বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতেও বিক্রি হয়। অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে ১ কেজি তাজা অ্যাভোকাডোর দাম প্রায় ১৫০০ টাকার কাছাকাছি হতে পারে। চাহিদা, বৈচিত্র্য এবং বাজারের অবস্থার উপর ভিত্তি করে অ্যাভোকাডোর দাম ওঠানামা করতে পারে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪