গাজরের পুষ্টিগুণ ও গাজর চাষ পদ্ধতি

গাজর 

গাজরের ইংরেজি শব্দ হলো Carrot. গাজর এক ধরনের সবজি। বাংলাদেশে গাজর বানিজ্যিক ভাবে চাষ হয়ে থাকে। আমাদের দেশে গাজরের সালাদ অনেক বেশি জনপ্রিয়। পুষ্টি গুনে ভরপুর এই সবজি নিয়েই আমাদের আজকের ব্লগ পোস্ট। 


গাজরের পুষ্টিগুণ 

পোস্টসূচীপত্রঃগাজর পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি সবজি। নিচে গাজরের পুষ্টিগুণ আলোচনা করা হলোঃ

গাজরে প্রধানত ক্যালোরি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার ইত্যাদি উপাদান থাকে। গাজরে প্রচুর ক্যালোরি থাকে। 

প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে থাকে –

  • ৪১ গ্রাম ক্যালোরি
  • ০.৯ গ্রাম প্রোটিন
  • ৯.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
  • ২.৮ গ্রাম ফাইবার 

গাজর খাওয়ার উপকারিতা 

গাজর খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিচে গাজর খাওয়ার কিছু প্রধান উপকারিতা উল্লেখ করা হলোঃ

  • দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে – গাজরে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন বা ভিটামিন-এ রয়েছে। গাজর রাতকাণা রোগ প্রতিহত করে। 
  • ত্বক ভালো রাখে – গাজরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন-সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, তাকে ক্ষত সারাতে সাহায্য করে, ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সহায়তে পারে। 
  • হজমশক্তি বাড়ায় – গাজরে থাকা ফাইবার হজম শক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। 
  • হৃদরোগের ঝুকি কমায় – গাজরে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। হৃদরোগের ঝুকি কমায় এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় – গাজরে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, এবং ভিটামিন-কে রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। 
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় – গাজরে থাক কারটিনয়েড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের ফুসফুস, স্তন এবং পেটের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।  
  • হাড় শক্তিশালী করে – গাজরে থাকা ভিটামিন-কে, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস আমাদের দাঁত ও হাড় মজবুত করে।

গাজর চাষ পদ্ধতি 



গাজর চাষ করতে হলে সঠিক পদ্ধতি এবং পরিচর্যা প্রয়োজন। বাংলাদেশে জনপ্রিয় লাভজনক গাজরের জাতগুলো হলোঃ

  • বারি গাজর - ১
  • বারি গাজর - ২
  • ইম্পেরেটর জাত
  • নাস্তেস জাত

নিচে সঠিক পদ্ধতিতে গাজর চাষ দেখানো হলোঃ

  • মাটি – গাজর চাষের জন্য বেলে দোআঁশ মাটি বা দোআঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। মাঠে হতে হবে ঝুরঝুরে এবং গভীর। 

জমি প্রস্তুতকরণ 

মাটি ভালোভাবে চাষ দিয়ে নরম ও ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। জমির আগাছা এবং পাথর পরিষ্কার করুন। প্রতি শতাংশ জমিতে ৫-৬ কেজি পচা গোবর প্রয়োগ করুন। 

বীজ বপন পদ্ধতি 

  • বীজ বপনের সময় – গাজর চাষের জন্য উপযুক্ত সময় হলো অক্টোবর-নভেম্বর। 
  • বীজের পরিমাণ – প্রতি শতকে প্রায় ১৫০ - ২০০ গ্রাম বীজ বপন করতে হবে। 
  • বপন পদ্ধতি – সারি করে বীজ বপন করতে হবে। এক সারি থেকে আরেক সারির দুরত্ব ২০ সে.মি. এবং এক গাছ থেকে আরেক গাছের দুরত্ব ৫-৭ সে.মি. হতে হবে। মাটির ১-২ সে.মি. গভীরে বীজ বপন করুন।

সেচ 

বীজ বপনের পর মাটি হালকা ভেজা রাখুন। জমিতে যেন অতিরিক্ত জলাবদ্ধতা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বীজ বপনের পর ১৫-২০ দিনের মধ্যে নিয়মিত সেচ প্রদান করুন। এরপর ১০ দিন অন্তর অন্তর সেচ দিন। 

সার প্রয়োগ

জমি প্রস্তুত এর সময় গোবর বা জৈন সার প্রয়োগ করুন। এর ২৫ দিন পরে ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিন এরপর সেচ দিন। গাজর গাছের বয়স ৪০-৫০ দিন হলে পটাশ এবং ফসফরাস সার দিতে হবে।

আগাছা দমন এবং পরিচর্যা 

নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। কারণ আগাছা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। মাটি নরম ও ঝুরঝুরে রাখতে সেচ দিন। পোকামাকড় আক্রমণ করলে দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা নিন। 

ফসল সংগ্রহ 

গাজর গাছের বীজ বপনের ৮০-১০০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়। গাজরের গায়ে হালকা ফাটল ধরলে বুঝবেন এটি সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। গাজর তোলার সময় খেয়াল রাখবেন গাজরের মূল যেন ভেঙে না যায়।

সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব এবং এটি একটি লাভজনক চাষাবাদ। 

গাজরের রেসিপি 



আমরা কম বেশি সবাই জানি, গাজরের সালাদ অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু সালাদ বাদেও গাজরের বেশ কিছু জনপ্রিয় রেসিপি রয়েছে। যেমনঃ গাজরের হালুয়া, গাজরের স্যুপ, গাজরের কেক, গাজরের জুস, গাজরের আচার, ইত্যাদি।

রূপচর্চায় গাজর 

গাজর শুধুমাত্র খাবার হিসেবেই জনপ্রিয় না, গাজরের মাধ্যমে রূপচর্চা ও হয়ে থাকে। নিচে গাজরের রূপচর্চার বিভিন্ন ব্যবহার উল্লেখ করা হলোঃ

  • গাজরের ফেস প্যাক – ত্বক উজ্জ্বল, মসৃণ ও কালো দাগ দূর করতে গাজরের ফেস প্যাক খুবই কার্যকারী। গাজরের ফেস প্যাক মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • গাজরের টোনার – গাজরের রস টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটা ত্বককে সতেজ রাখে। নিয়মিত দিনে ২ বার মুখে স্প্রে করুন। 
  • গাজরের স্ক্রাব – গাজরের স্ক্রাব মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বক মসৃণ করে। মুখে হালকা ভাবে ঘষে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। 
  • চোখের নিচে কালো দাগ দূরীকরণে – গাজরের রস চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল হালকা করে। ১০-১৫ মিনিট চোখের নিচে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। 
  • গাজরের ময়েশ্চারাইজার – ত্বক নরম ও উজ্জ্বল রাখে। ত্বক হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।
  • ত্বকে গাজরের মাস্ক – ত্বককে উজ্জ্বল ও প্রাকৃতিকভাবে ফর্সা করে। গাজরের মাস্ক ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪