চা। চায়ের উপকারিতা - অপকারিতা। চা কত প্রকারের হয়
চা
চা হলো সুগন্ধযুক্ত ও স্বাদবিশিষ্ট এক ধরনের উষ্ণ পানীয়। চাপাতা পানিতে ফুটিয়ে তৈরি করা হয়। চা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনসিস। চা মূলত চীনা শব্দ।
চা কত প্রকার? চায়ের ধরন
পোস্টসূচীপত্রঃচা হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়। সারা পৃথিবীতে চায়ের কদর রয়েছে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের চা পাওয়া যায়। গোটা বিশ্বে হাজার ধরনের চা পাওয়া যায়। সারা বিশ্বের জনপ্রিয় ১০টি চা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- হোয়াইট টি – এই চা কে সবচেয়ে খাটি চা বলা হয় থাকে। অন্য সব চায়ের তুলনায় এই চায়ের প্রক্রিয়াজাতকরণে তুলনামূলকভাবে কম পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এই চায়ের রং হালকা এবং গন্ধও অনেক কম হয়ে থাকে।
- গ্রিন টি – সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় চা হচ্ছে গ্রিন টি বা সবুজ চা। বিশেষ করে এশিয়ার মধ্যে এর চাহিদা ব্যাপক। এই চায়ের অনেক উপকারি দিক রয়েছে।
- উ-লং টি – এই চা সবচেয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে চীনে। চীনের রেস্টুরেন্ট গুলোতে সবচেয়ে বেশি চলে এই চা।
- ব্ল্যাক টি – অধিকাংশ মানুষ এই চা খেয়ে থাকেন। ফুটন্ত পানিতে চাপাতা দিয়ে কড়া লিকারের বানানো হয়।
- হার্বাল টি – এই চায়ে কোনো প্রকার ক্যামেলিয়া উদ্ভিদের কোনো পাতা থাকে না। এই চায়ে খাঁটি হার্বাল উপাদান, ফুল এবং ফলের মিশ্রণ থাকে।
- রুইবস টি – দক্ষিণ আফ্রিকার লালচে ঝোপ নামে পরিচিত বিশেষ প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে এই চা বানানো হয়। এটি রেড টি নামেই বেশি পরিচিতি লাভ করেছে।
- মেট টি – যারা কফি পছন্দ করেন তাদের কাছে খুবই জনপ্রিয় এই চা। এর স্বাদ অনেকটা কফির মতো। মেট হলো আর্জেন্টিনার এক বুনো উদ্ভিদ।
- বলুমিং টি – অনেকে এই চা কে রোমান্টিক চা বলে থাকেন।
- টি ব্লেন্ডস – বিভিন্ন উন্নতমানের একাধিক চা এর মিশ্রণে তৈরি করা হয় এই চা।
- মাকাইবারি টি – পৃথিবীর সবচেয়ে দামি চায়ের মধ্যে অন্যতম এই চা। দার্জিলিংয়ের এই চা সম্প্রতি প্রতি কেজি ১৮৫০ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
চা এর উপকারিতা
চা শুধু অভ্যাসই নয়, সেই সাথে শরীরের জন্য উপকারীও। এর পুষ্টিগুন অনেক।
- আমাদের শরীর কে সতেজ রাখতে সাহায্য করে
- হাড়ের গঠনের পাশাপাশি দন্ত ক্ষয় রোধ করে
- ঠান্ডা, কাশি, গলা ব্যথা উপশম হয়
- উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে
- মানসিক চাপ কমায়
চা এর অপকারিতা
চা পানে যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে, ঠিক তেমনি কিছু অপকারিতা করেছে। আমরা জানি চায়ের মধ্যে ক্যাফেইন থাকে, এজন্য অতিরিক্ত চা পান করলে আমাদের শরীরে কিছু নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে
- স্নায়ুতন্ত্রে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে
- ঘুমে ব্যাঘাত করতে পারে
- হৃদস্পন্দন দ্রুত করে দিতে পারে
- অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে
- চায়ের মধ্যে থাকা ট্যানিন দাঁতে দাগ তৈরি করতে পারে
- ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়তে পারে
- গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত চা পান করলে শিশুর জন্ম জনিত সমস্যা হতে পারে
- ক্যাফেইনের মাত্রা বেশি হলে মাথা ব্যথা হতে পারে
চা পানে সাবধানতা
- দিনে ২-৩ কাপের বেশি চা পান করবেন না।
- খালি পেটে চা পান করবেন না।
- কম ক্যাফেইন যুক্ত চা অথবা ভেষজ চা পান করুন
- খাবার খাওয়ার ১-২ ঘন্টা আগে বা পরে চা পান করুন
- গর্ভাবস্থায় দিনে ১-২ কাপের বেশি চা পান করবেন না
অতিরিক্ত চা পান করবেন না, সঠিক পরিমাণে চা পান করুন, সুস্থ থাকুন।
চা রেসিপি
চায়ের রেসিপি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ২টি চায়ের রেসিপি নিচে দেওয়া হলোঃ
দুধ চা
২ কাপ পানিতে ১.৫ চা চামচ চা পাতা ও স্বাদমতো চিনি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। পানি ফুটে চায়ের রং বের হলে তার সাথে দুধ যোগ করুন। ২-৩ মিনিট কম আঁচে জ্বাল দিন। ২-৩ মিনিট পর ছেঁকে কাপ বা মগে পরিবেশন করুন।
গ্রিন টি
১ কাপ পানি ফুটিয়ে ২ মিনিট ঠান্ডা করে নিন। ১ টি গ্রিন টি ব্যাগ পানিতে ডুবিয়ে ২-৩ মিনিট রাখুন। এরপর পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে পরিবেশন করুন।
চায়ের ইতিহাস
চায়ের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের পুরনো। চায়ের উৎপত্তি হয় চীনে। প্রাচীন চীনা কিংবদন্তি শেন নুং (Shen Nung) একদিন বিকেলে গরম পানি পান করছিলেন। হঠাৎ গাছ থেকে ২/১ টা ঝরা পাতা এসে তার গরম পানির কাপের মধ্যে পড়ে যায়। তখন শেন নুং খেয়াল করেন ঐ পাতা তার পানিতে পড়ার সাথে সাথেই পানির রং পরিবর্তন হয়ে একধরনের সুগন্ধি পানীয় তে রুপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। এটাই হচ্ছে চা।
চীনের তাং রাজবংশ ৬১৮ - ৯০৭ খ্রিষ্টাব্দ চায়ের প্রথম সোনালী যুগ হিসেবে পরিচিত। এরপর চীনা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মাধ্যমে চা জাপানে আসে। ১৬শ শতকে পর্তুগিজ ও ডাচ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে চা ইউরোপে আসে। ১৭শ শতকে চা ইংল্যান্ডে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ইংরেজ রানী ক্যাথারিন অব ব্রাগাঞ্জা চায়ের ভক্ত ছিলেন। তখন থেকেই চা আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে ওঠে।
প্রাচীনকাল থেকেই ভারতের আসামের আদিবাসীরা প্রাকৃতিকভাবে বুনো চা পাতা ব্যবহার করতো। তখন চা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা তেও ব্যবহৃত হতো। ১৮শ শতকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে চায়ের বাণিজ্যিক চাষ শুরু করে।
১৮৪০ সালের দিকে বাংলাদেশে চায়ের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়। বাংলাদেশে সিলেটের মালিনীছড়াতে প্রথম চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ শাসনের সময় আসাম ও সিলেট অঞ্চলের চা বাগানের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। বর্তমানে শ্রীমঙ্গল, পঞ্চগড় এবং চট্টগ্রামের চা বাগান বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
চায়ের ব্রান্ড
বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে অনেক জনপ্রিয় চায়ের ব্রান্ড রয়েছে। নিচে কিছু জনপ্রিয় চায়ের ব্র্যান্ডের তালিকা দেওয়া হলোঃ
বাংলাদেশের জনপ্রিয় চায়ের ব্রান্ড
- ইস্পাহানি টি (Ispahani Tea) – ইস্পাহানি মির্জাপুর হলো বাংলাদেশে চায়ের শীর্ষ ব্রান্ড।
- তাজা টি (Taaza Tea) – তাজা টি হলো বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইউনিলিভার ব্রান্ডের একটি পণ্য।
- আলিম ইন্ডাস্ট্রিজ চা (Alim Tea) – বিভিন্ন ধরনের চা পাতার জন্য পরিচিত ব্যান্ড।
- প্রাণ টি (PRAN Tea) – স্বল্প দামে মানসম্মত চা হওয়ায় গ্রামীণ বাজারে এটি বেশ জনপ্রিয়।
- কোহিনূর টি (Kohinoor Tea) – এই ব্রান্ডের চা পাতার চমৎকার মান এবং স্বাদ রয়েছে।
- এসএস টি (SS Tea) – বাংলাদেশের আরেকটি পুরনো এবং বিশ্বস্ত ব্রান্ড।
আন্তর্জাতিক জনপ্রিয় চায়ের ব্রান্ড
- লিপটন (Lipton) – লিপটন বিভিন্ন ধরনের চা সাশ্রয়ী দামে বিক্রয় করে থাকে।
- টেটলি (Tetley) – টেটলি বিশ্বজুড়ে পরিচিত ব্রান্ড। স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য গ্রিন টি এবং হারবাল টি বিক্রয় করে থাকে এই ব্রান্ড।
- টুইনিংস (Twinings) – টুইনিংস হলো যুক্তরাজ্যের ঐতিহ্যবাহী ব্র্যান্ড। উচ্চমানের স্পেশাল চা বিক্রির জন্য পরিচিত।
- ডিলমাহ (Dilmah) – ডিলমাহ হলো শ্রীলংকার বিখ্যাত ব্রান্ড।
- ইয়র্কশায়ার টি (Yorkshire Tea) – যুক্তরাজ্যের আরেকটি জনপ্রিয় ব্রান্ড। এটি ক্লাসিক ব্রেকফাস্ট ব্লেন্ডের জন্য পরিচিত।
- রেড রোজ (Red Rose) – উত্তর আমেরিকার জনপ্রিয় চা ব্রান্ড।
- প্ল্যানটেশন টি (Plantation Tea) – উন্নত মানের অর্গানিক চায়ের জন্য বিখ্যাত।
বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল চায়ের ব্রান্ড
- Harney & Sons
- Mariage Freres
- Fortnum & Mason
- The Tea Spot
চা প্রথম চীন থেকে উৎপত্তি হলেও এটি এখন বিশ্ববিদ প্রচলিত। চা সামাজিক যোগাযোগ এবং অতিথি আপ্যায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। চায়ের উপকারী এবং অপকারী দুই দিকই রয়েছে। আমাদের উচিৎ সঠিক নিয়মে পরিমাণ মতো চা পান করা।
এখানে কমেন্ট করুন
comment url