সহজে ছাদ বাগান করার পদ্ধতি

ছাদ বাগান

ছাদ বাগান হলো এমন একটি বাগান ব্যবস্থা, যা বাসা বাড়ির ছাদের উপর গড়ে তোলা হয়। ছাদে বাগান করার এই পদ্ধতি শহর অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। অনেকে শখে করেন আবার অনেক প্রয়োজনে। 



ছাদ বাগান কেন প্রয়োজন বা গুরুত্বপূর্ণ? 

পোস্টসূচীপত্রঃবর্তমানে ছাদে বাগান করার এই পদ্ধতি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শহর অঞ্চলে প্রায় সব বাসা বাড়িতেই ছাদ বাগান চোখে পড়ে। ছাদ বাগান কেন প্রয়োজন বা আসলেই ছাদ বাগান গুরুত্বপূর্ণ কি না সেটাই দেখবো আমরা। 

হ্যা, ছাদ বাগান আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। যে সকল কারণে ছাদ বাগান প্রয়োজন 

  • পরিবেশ সংরক্ষণ 
  • নির্ভেজাল খাদ্য উৎপাদন 
  • পরিবেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
  • মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য 
  • শহর অঞ্চলে সবুজায়ন বৃদ্ধি 
  • অর্থনৈতিক উন্নয়ন 

পরিবেশ সংরক্ষণ – আমরা সকলেই জানি, গাছপালা কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে। আমাদের শহর অঞ্চল গুলোতে বেশি বেশি ভবন তৈরির কারণে ফাকা জায়গা নেই বললেই চলে। এজন্য ভবনের ছাদে গাছ লাগানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। ছাদ বাগানের ফলে শহরের বায়ু দূষিত কম হয়। বৃষ্টির পানি শোষণ করে ছাদ বাগান জলাবদ্ধতা কমাতে সাহায্য করে। 

নির্ভেজাল খাদ্য উৎপাদন – ছাদ বাগানে বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফুল ও ফলের গাছ লাগানো যায়। শাকসবজি, ফল ও মসলা উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণ হয়। জৈব সার প্রয়োগের কারণে রাসায়নিক মুক্ত ও স্বাস্থ্যকর শাকসবজি পাওয়া যায়। বাসার ছাদেই বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উৎপাদন করায় বাজার থেকে খাদ্য পণ্য কেনার খরচ কিছুটা কমে যায়।  

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ – গাছপালা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আপনি যদি আপনার বাসা বাড়ির ছাদে বাগান তৈরি করেন, তাহলে ভবনের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ৪ থেকে ৫° সেলসিয়াস পর্যন্ত কম থাকে। 

মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য – দৈনন্দিন জীবনে আমরা আমাদের কাজের ফাকে যতটুকু সময় পায়, ততটুকু সময় গাছের সাথে কাটালে মানসিক চাপ কমে। প্রকৃতির তাজা বাতাস শরীরকে সতেজ রাখে। নিয়মিত বাগান পরিচর্যা করলে মন ও শরীর উভয় ভালো থাকে। সবুজ গাছপালার দিকে তাকালে চোখ ভালো থাকে।

শহর অঞ্চলে সবুজায়ন বৃদ্ধি – শহরে ভবন তৈরির কারণে গাছপালা নেই বললেই চলে। আগামী ৫০ বছর পর এর অবস্থা আরো খারাপ হবে। ছাদ বাগান করলে শহরে গাছপালা বৃদ্ধি পাবে, ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড কমে যাবে এবং অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি হবে। ভবনের ছাদ ব্যবহার করে শহরে সবুজায়ন বৃদ্ধি করা সম্ভব। 

অর্থনৈতিক উন্নয়ন – ছাদ বাগান থেকে উৎপাদিত শাকসবজি, মসলা এবং ফল পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বিক্রয়ের মাধ্যমে অতিরিক্ত আয় করা যায়। এছাড়া ছাদ বাগান জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ছাদ বাগান করতে কি কি প্রয়োজন 

ছাদ বাগান করতে বেশ কিছু জিনিস প্রয়োজন হয়। যেমনঃ

প্রথমেই জায়গা নির্বাচন করতে হবে। যে ছাদে বাগান করবেন ভাবছেন, সেই ছাদে যেন পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাওয়া যায় এটা খেয়াল রাখতে হবে। এরপর আপনার ছাদে কি গাছ লাগাবেন, সেটা নির্বাচন করতে হবে। আপনি বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগাতে পারেন, ফলের গাছ লাগাতে পারেন, শাক সবজির গাছ লাগাতে পারেন, অথবা মসলা জাতীয় গাছ লাগাতে পারেন। ছাদ বাগানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো মাটি নির্বাচন। ভালো মানের মাটি ব্যবহার করতে হবে এবং জৈব সার কম্পোস্ট ব্যবহার করতে হবে। এরপর যে পাত্র বা টবে গাছ লাগাবেন সেই পাত্র নির্বাচন করতে হবে।যেমন, মাটির টব বা প্লাস্টিকের ড্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে। নিয়মিত পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। টবে বা যে পাত্রে গাছ লাগাবেন, সেটাতে পানি নিষ্কাশনের জন্য ছিদ্র করতে হবে। পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের জন্য জৈব কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। 

ছাদ বাগানের মাটি তৈরি 

ছাদ বাগান করার অন্যতম প্রধান কাজ হলো মাটি তৈরি। ঠিক ভাবে মাটি তৈরি করতে না পারলে ছাদে ফুল-ফল কোনোটাই ভালো হবে না। ছাদ বাগানের মাটি তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু ধাপ হলোঃ

  • মাটি – ৫০% 
  • গোবর সার অথবা ভার্মি কম্পোস্ট – ২৫%
  • কোকোপিট – ১৫%
  • পাথর গুঁড়ো বা বালি – ১০%

সব উপাদান গুলো ঝরঝরে করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।

ছাদ বাগানের জন্য উপযুক্ত গাছ নির্বাচন 

আপনি ছাদ বাগানে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগাতে পারেন। যেমন - ফলের গাছ, ফুলের গাছ, শাকসবজি, মশলার গাছ, ভেষজ গাছ, সৌন্দর্যবর্ধক গাছ, ইত্যাদি। 

ফলের গাছ – আম, লেবু, আমড়া, বাতাবি লেবু, পেয়ারা, আঙ্গুর, স্ট্রবেরি, ড্রাগন, বরই ইত্যাদি আরো বিভিন্ন ফলের গাছ ছাদ বাগানে লাগানো যায়।

ফুলের গাছ – গোলাপ, গাদা, জবা, রজনীগন্ধা, বেলি, হাসনাহেনা, কৃষ্ণচূড়া, চন্দ্রমল্লিকা, রঙ্গন, টগর, বাগান বিলাস, টগর, ডালিয়া, ইত্যাদি। 

শাকসবজি – টমেটো, লাউ, পটল, করলা, বেগুন, লাল শাক, পুইশাক, পালংশাক, কলমি শাক, কুমড়া শাক, কাঁচামরিচ, চিচিঙ্গা, গাজর, মুলা, লেটুস পাতা ইত্যাদি। 

মশলা গাছ – ধনেপাতা, পুদিনা পাতা, আদা, হলুদ, লবঙ্গ, লেমন গ্রাস, ইত্যাদি। 

ভেষজ গাছ – অ্যালোভেরা, তুলসী, আদা, ইত্যাদি। 

সৌন্দর্যবর্ধক গাছ – বনসাই, মানিপ্ল্যান্ট, ছোট জাতের বাঁশ গাছ, পিস লিলি, স্নেক প্ল্যান্ট ইত্যাদি। 

আপনিও চাইলে উপরোক্ত বিষয় গুলো বিবেচনায় রেখে আপনার ছাদে ছোট অথবা বড় পরিসরে ছাদ বাগান শুরু করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪