শসা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা? শসা চাষ পদ্ধতি

শসা হলো একপ্রকার সবজি, সারা বিশ্বে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। শসার ইংরেজি হলো Cocumber. শসার বৈজ্ঞানিক নাম Cocumis sativus. শসায় প্রায় ৯৫% পানি থাকে।


শসা খাওয়ার উপকারিতা 

পোস্টসূচীপত্রঃশসা খাওয়ার বেশকিছু উপকারিতা রয়েছে। যেমন

ওজন কমাতে সাহায্য করে – শসায় ক্যালোরি কম এবং ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় শরীরে ওজন কমাতে সাহায্য করে। 

ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে – শসায় সিলিকা ও এন্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। সিলিকা ও এন্টি-অক্সিডেন্ট ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। 

হজমে সহায়তা করে – শসায় থাকা ফাইবার হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে – শসায় পটাশিয়াম রয়েছে। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ শসা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। 

চোখের জ্যোতি বাড়ায় – শসা চোখের জ্যোতি বাড়ায়। শুধুমাত্র এই কারনেও অনেকে নিয়মিত শসা খায়।

শসা খাওয়ার অপকারিতা 

শসা খাওয়ার যেমন বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে, তেমনই কিছু অপকারিতাও আছে। যেমন

পেটে গ্যাস তৈরি করে – কিছু কিছু মানুষের শসা খাওয়ার পরে পেটে গ্যাস হয়। তবে এটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, কিছু কিছু মানুষের এমন হয়ে থাকে। 

অতিরিক্ত ঠান্ডা – শসা ঠান্ডা প্রকৃতির সবজি। তাই ঠান্ডা বা সর্দি-কাশি থাকলে শসা না খাওয়ায় ভালো।

ডায়রিয়া বা বমিভাব – শসায় ৯৫% পানি রয়েছে। অতিরিক্ত পানি থাকার ফলে কিছু মানুষের জন্য হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। 

এলার্জি – শসায় থাকা কিছু প্রাকৃতিক উপাদান এলার্জির কারণ হতে পারে। যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে অথবা শসা খেলে এলার্জি সমস্যা হয় তাদের শসা না খাওয়ায় ভালো। 


সৌন্দর্য এবং ত্বকের যত্নে শসার ব্যবহার 

শসা সৌন্দর্য এবং ত্বকের যত্নে অনেক উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। ত্বক যত্নে শসা ব্যবহারের কিছু জনপ্রিয় উপায় 

চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল দুর করে 

ব্যবহার বিধি – শসা পাতলা করে কেটে চোখের উপর ১০-১৫ মিনিট রাখুন। এতে চোখের ক্লান্তি দূর হবে এবং ডার্ক সার্কেল কমাবে। শসার শীতলতা এবং ভিটামিন K ডার্ক সার্কেল হালকা করতে সাহায্য করে। 

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে 

ব্যবহার বিধি – শসা থেকে আগে রস বের করে নিন। এরপর তুলার সাহায্যে রস সম্পূর্ণ মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। শসার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং দাগ হালকা করে। 

ব্রণ ও ত্বকের প্রদাহ কমায় 

ব্যবহার বিধি – শসার রস এবং লেবুর রস মিশ্রিত করে মুখে লাগান। ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখুন। এরপর মুখ ধুয়ে ফেলুন। শসা ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রদাহ কমায়। 

ত্বক ময়েশ্চারাইজার করে

ব্যবহার বিধি – শসার রসের সাথে মধু মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে দিন। এরপর মুখ ধুয়ে ফেলুন। শসা ও মধুর মিশ্রণ ত্বককে মসৃণ রাখে। 

সানবার্ন দূর করে 

ব্যবহার বিধি – শসার রসের সাথে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। শসার শীতল প্রভাব সানবার্ন থেকে ত্বককে আরাম দেয়। 


শসার রেসিপি 

শসা শুধু রূপ চর্চার কাজে ব্যবহৃত হয় না। শসা দিয়ে বেশ কিছু সহজ রেসিপি তৈরি করা যায়। যেমন

শসার সালাদ 

প্রস্তুত প্রণালী – ২টি শসা পাতলা করে কেটে নিন, ১টি টমেটো কিউব করে কেটে নিন, ১টি পেঁয়াজ পাতলা করে কেটে নিন। এরপর এগুলো একটি বাটিতে নিয়ে ভালোভাবে মেশান। এর মধ্যে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস, পরিমাণ মতো লবণ, এবং আধা চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়া করে ছিটিয়ে দিন। ভালোভাবে মেশান। উপরে একটু ধনেপাতা কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।

শসার ডিটক্স ওয়াটার 

প্রস্তুত প্রণালী – ১টি জগে এক লিটার পানি নিন। এরমধ্যে ১টি শসা স্লাইস করে কেটে দিন, ১টি লেবু স্লাইস করে কেটে দিন, এবং ১০ থেকে ১২ টি পুদিনাপাতা দিন। এরপর ফ্রিজে ২-৩ ঘন্টা রেখে ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন।

শসার রায়তা

প্রস্তুত প্রণালী – একটি বাটিতে ১কাপ টক দই ভালোভাবে ফেটে নিন। এরমধ্যে ১টি শসা কুচি, পরিমাণমতো লবণ, ১ চা চামচ ভাজা জিরা গুড়া দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। উপরে একটু ধনেপাতা দিয়ে পরিবেশন করুন।

শসার স্মুদি

প্রস্তুত প্রণালী – ব্লেন্ডারে ১টি শসা কুচি করে দিন, আধা কাপ দই, ১ টেবিল চামচ মধু, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস, এবং ২-৩ টুকরো বরফ দিয়ে ভালোভাবে ব্লেড করুন। এরপর ঠান্ডা অবস্থায় গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন করুন।

শসা চাষ পদ্ধতি

শসা একটি জনপ্রিয় সবজি, এই সবজি বাংলাদেশে প্রচুর চাষ হয়। তুলনামূলক সহজে চাষ করা যায় এবং সঠিক পরিচর্যা করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। 

শসা চাষের পদ্ধতি গুলো হলো

  • মাটি প্রস্তুতি 
  • জাত নির্বাচন 
  • বীজ বপন  
  • সার প্রয়োগ 
  • সেচ ও আগাছা নিধন 
  • পরিচর্যা 
  • ফল সংগ্রহ 

মাটি প্রস্তুতি 

শসা চাষের জন্য দোআঁশ মাটি বা বেলে দোআঁশ মাটি উপযুক্ত। মাটি ভালোভাবে চাষ দিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে মাটির ph মাত্রা ৫.৫ - ৬.৫ হলে শসার ফলন ভালো হয়।

জাত নির্বাচন  

বাংলাদেশে শসার বেশ কিছু উন্নত জাত রয়েছে। এরমধ্যে প্রধান ৩ টি জাত হলো

  1. বারি শসা-১
  2. বারি শসা-২
  3. হাইব্রিড জাত

সার প্রয়োগ 

ইউরিয়া: ১৫০ - ২০০ কেজি/হেক্টর 

টিএসপি: ১০০ - ১৫০ কেজি/হেক্টর 

এমওপি: ১০০ - ১৫০ কেজি/হেক্টর 

অর্ধেক সার বীজ বপনের আগে এবং বাকি অর্ধেক সার চারা গজানোর পর দিতে হবে। 

বীজ বপন   

রবি মৌসুমে (শীতকালীন) এবং খরিফ মৌসুমে (গ্রীষ্মকালীন) শসা চাষ করা যায়। বীজ সরাসরি জমিতে বপন করা হয়। প্রতি গর্তে ২ থেকে ৩টি বীজ বপন করতে হয়। এক গর্ত থেকে আরেক গর্তের দূরত্ব হয় ৪০ থেকে ৫০ সেমি। এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হয় ১.৫ - ২ মিটার।

সেচ ও আগাছা নিধন 

শসা গাছে নিয়মিত সেচ দিতে হয়, বিশেষ করে গরমে এবং নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হয়।

পরিচর্যা 

শসার ভালো ফলন পেতে হলে মাচা তৈরী করতে হয়। অন্যসব গাছের মতো শসা গাছেও রোগবালাই এবং পোকামাকড় আক্রমণ করে থাকে। রোগবালাই এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে প্রতিকার পেতে সঠিক পরিমাণে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করুন। 

ফল সংগ্রহ 

বীজ বপনের ৪০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শসা সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময়। বাজারের চাহিদা বুঝে শসা তোলার সময় ঠিক করা ভালো। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে কমেন্ট করুন

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪