ফ্রিল্যান্সিং এর অসুবিধা ও সতর্কতা
ফ্রিল্যান্সিং করলে সবসময় যে শুধু অনেক টাকা পয়সাই ইনকাম হয়, এরকম কিছুনা। ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে আপনাকে জীবনে অনেক অসুবিধার সম্মুখীনও হতে হবে।
১. স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা
যেসব ফ্রিল্যান্সাররা রাত জেগে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন, তাদের প্রথম স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যে সমস্যাটা হয় তা হলো - Back Pain. কোনো ফ্রিল্যান্সার যখন এক মাস, দুই মাস থেকে শুরু করে এক বছর, দুই বছর ফ্রিল্যান্সিং করে, তখন আস্তে আস্তে Back Pain এর সমস্যাটা তৈরি হয়। প্রতিনিয়ত দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করার কারণে এই সমস্যাটা হয়। এজন্য ফ্রিল্যান্সারদের উচিত নিয়মিত ব্যায়াম করা। কাজ করার ফাঁকে যখনই সময় পাওয়া যায়, তখন একটু ব্যায়াম করা উচিত।
রাতের বেলা কাজ করার কারণে ঘুমের imbalance হয় এবং কাজের মধ্যে মগ্ন থাকার কারণে যত সময় খাবার গ্রহণ করা হয় না, ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়।
যেহেতু আপনি রাতের বেলা কাজ করেন, ক্ষেত্রে আপনার work and social life এর মধ্যে balance করতে একটু সমস্যা হয়। যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন বা করছেন, তারা এটা খুব ভালোভাবে বুঝবেন বা উপলব্ধি করতে পারবেন।
২. ব্যক্তিগত কাজের পরিচয়
যেহেতু বাংলাদেশে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করাকে কোনো তথাকথিত পেশার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না, তাই অনেকের কাছে ফ্রিল্যান্সিং কাজের পরিচয় বোঝানো মুশকিল।
এক্ষেত্রে যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন, তারা বিদেশি কোনো কোম্পানির প্রোজেক্ট ভিত্তিক কাজ করেন, এমন কথা বলতে পারেন। এরকম বললে আইডেন্টিটি তৈরি হয় এবং মানুষকে বোঝানো সম্ভব হয়।
৩. ফ্রিল্যান্স প্রোফাইল রিস্ক
যারা মার্কেটপ্লেস নির্ভর করে কাজ করেন, তাদের প্রোফাইল যেকোনো কারণেই ঐ মার্কেটপ্লেস ব্যান করে দিতে পারে। একবার প্রোফাইল ব্যান হয়ে গেলে ঐ পোর্টফোলিও এবং একাউন্টে থাকা সকল ডলার ও হারিয়ে যাবে।
সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় - অনেকদিন ধরে অল্প অল্প করে গড়ে তোলা প্রোফাইল এবং ওই প্রোফাইলের সাকসেস হারিয়ে গেলে। কারণ এগুলো দেখেই নতুন ক্লায়েন্ট ফ্রিল্যান্সারদের কে কাজ দেয়।
So, একাউন্ট ব্যান হতে পারে এমন কোন কাজ করা যাবে না। মার্কেটপ্লেস এর কিছু গাইডলাইন থাকে, ঐ গাইডলাইন মেনে কাজ করলে আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যান হবে না।
৪. ২৪/৭ অ্যাক্টিভ অনলাইন
যখন ফ্রিল্যান্সিং করবেন, তখন আপনাকে সপ্তাহে সাত দিনই অনলাইনে অ্যাক্টিভ থাকতে হবে। সেটা মোবাইলের মাধ্যমে হোক কিংবা কম্পিউটারের মাধ্যমে হোক। কারণ - মার্কেটপ্লেসে কে কখন নক দেবে কোন কাজের জন্য, তার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। তাই কম্পিউটার বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সবসময় অ্যাক্টিভ থাকতে হয়।
সবসময় অ্যাক্টিভ থাকার জন্য প্রয়োজন হয় সচল ইন্টারনেট কানেকশন থাকা ডিভাইস। সবসময় Responsive মনোভাব ধরে রাখাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং।
ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে সতর্কতা
১. ক্লায়েন্ট এর সাথে no personal communication
মার্কেটপ্লেসে ক্লায়েন্টের সাথে ভুলেও যা করা যাবে না –
১. আপনার সাথে পার্সোনাল কমিউনিকেশন করার কোনো উপায়, যেমন: WhatsApp, Facebook ইত্যাদি শেয়ার করা যাবে না।
২. কাজ ব্যতীত কোন ধরনের এক্সটার্নাল লিংক দেয়া যাবে না।
কারণ - মার্কেটপ্লেস কখনোই চায় না যে, আপনি কোন ক্লায়েন্টের সাথে personal deal করেন। এতে তার কমিশন নষ্ট হয়। তাই no personal communication.
২. ভুয়া/ Fake ক্লায়েন্ট থেকে সাবধান
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে গিয়ে অনেক ফ্রিল্যান্সার ভুয়া ক্লায়েন্টের সম্মুখীন হয়। কোনো ক্লায়েন্ট বা বায়ার কোনো কাজ দিলে সেটার জন্য লাফিয়ে না পড়ে ক্লায়েন্টের প্রোফাইল যাচাই করুন। অতঃপর কাজ শুরু করুন। ক্লায়েন্টের প্রোফাইল যাচাই করতে –
- ক্লায়েন্ট ভেরিফাইড কি না
- আগের পেমেন্ট হিস্টোরি কেমন
এগুলো দেখতে পারেন।
৩. কোনো অবস্থাতেই কারো সাথে কোনো একাউন্টের পিন বা পাসওয়ার্ড শেয়ার করা যাবে না।
অনেক ক্ষেত্রে একাউন্টে সমস্যা হতে পারে। কিংবা, একটা চক্র আছে, যারা একাউন্ট রিকভারি করার নামে আপনার সব আইডির পিন ও পাসওয়ার্ড নিয়ে নেয়।
এমতাবস্থায়, পাসওয়ার্ড শেয়ার করলে রিকভারি তো হবেই না বরং যা ছিল সেটাও হারিয়ে ফেলবেন।
৪. মৃত্যুর পর আপনার অনলাইন সম্পদ ম্যানেজ হবে কিভাবে?
আমরা সবাই ১ম জেনারেশন ফ্রিল্যান্সার। তাই মৃত্যুর পর, কে এই ভ্যালুয়েবল ফ্রিল্যান্স একাউন্ট এর মালিক হবে, কিভাবে কাজ ও ডলার ম্যানেজ করবে, এই বিষয়টি আগে থেকেই ভাবনার বিষয় হওয়া উচিত।
এখানে কমেন্ট করুন
comment url